
নিখোঁজ হওয়ার পর তিন মাসের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত স্কুল শিক্ষার্থী রাহুল ইসলাম রাফি (১৪) কোনো খোঁজ মিলেনি। যখন রাফির পরিবার জানতে পারে এটি নিখোঁজ নয়, ‘পরিকল্পিত অপহরণ’ তখন তাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
পরিবারের দাবি, রাফিকে পরিকল্পিতভাবে অপহরণ করা হয়েছে। এর পিছনে স্থানীয় বিএনপির কতিপয় লোকজন জড়িত। তিন মাসের বেশি সময় ধরে ছেলের খোঁজ না পেয়ে গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন রাফির পরিবার।
এ বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তারা। অতিদ্রুত তদন্তের মাধ্যমে ছেলেকে খোঁজে বের করে, যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা দাবি জানান পরিবার।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি নগরীর আকবরশাহ থানাধীন উত্তর কাট্টলী বিশ্বাস পাড়ার বাসিন্দা খোরশেদুল আলম এর ছেলে রাহুল ইসলাম রাফি (১৪) নিখোঁজ হন। রাফি আলহাজ্ব মোস্তফা হামিক উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
ঘটনার প্রেক্ষাপট আরও জটিল হয়ে ওঠে যখন জানা যায়, একই দিনে নিখোঁজ হন রাফির প্রতিবেশী আরেক কিশোরী। এলাকাবাসী ও রাফির পরিবারের ভাষ্যমতে, ওই কিশোরীর পরিবার স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, আর তার বাবা নুরুল আজম বিএনপির সক্রিয় কর্মী হিসেবে পরিচিত।
রাফির বাবা খোরশেদুল আলম জানান, আমরা যখন জিডি করতে যাই, তখন কিশোরীর পরিবার আমাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। এরপর থেকেই আমরা সন্দেহ করি এটি নিছক নিখোঁজ নয়, বরং পরিকল্পিত অপহরণ।
খোরশেদুল আলমের অভিযোগ, বারবার আকবরশাহ থানায় গিয়ে সাহায্য চাইলেও পুলিশ কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। গত তিন মাসে সন্দেহভাজনদের মোবাইল নম্বরের কললিস্ট পর্যন্ত সংগ্রহ করতে পারেনি পুলিশ। এই ব্যর্থতা তদন্ত প্রক্রিয়ার প্রতি প্রশ্ন তুলেছে।
আমরা বারবার অনুরোধ করেছি যে, সন্দেহভাজন কয়েকটি নম্বরের বিস্তারিত কল রেকর্ড সংগ্রহ করে দেখা হোক। কিন্তু পুলিশ এখনো তা করতে পারেনি। এতে বোঝা যাচ্ছে, এই তদন্তে আন্তরিকতার অভাব রয়েছে, বলেন রাফির পিতা।
এলাকাবাসীর মতে, দুই কিশোর-কিশোরীর একসাথে নিখোঁজ হওয়া নিছক কাকতালীয় নয়। তারা মনে করছেন, এর পেছনে কোনো সংঘবদ্ধ চক্রের হাত রয়েছে, যাদের সঙ্গে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নুরুল আজম বলেন, নবম শ্রেণিতে পড়–য়া আমার মেয়েও নিখোঁজ হয়, এখনো আমরা তার খোঁজ পাইনি। এ ঘটনায় আমরা থানায় জিডি করেছি। সামাজিকভাবেও সবাই জানে। নিজেরা বাচাঁর জন্য সবকিছু জানার পরও আামাদের নামে মিথ্যা ও বানোয়াট কথা ছড়াচ্ছে। এসবের সাথে আমরা কোনভাবেই সম্পৃক্ত নই।
একইভাবে অভিযোগের বিষয়ে নগরীর ১০ নং ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঈনুল ইসলাম মাঈনু বলেন, দুজনই একই এলাকার, সম্পর্ক করে চলে গেছে শুনলাম। তাদের বিষয়ে সামাজিকভাবে বিচার হয়েছে। এটি পারিবারিক বিষয়, কোন রাজনৈতিক বিষয় নয়। আমাকে জড়িয়ে যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তার সঙ্গে আমি কোনভাবে সম্পৃক্ত নই এবং জানিও না।
আকবরশাহ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জানান, নিখোঁজের বিষয়ে থানায় জিডি করা হয়েছে। বিস্তারিত তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানতে পারবো।