
-
শিপিং এজেন্টস নির্বাচন স্থগিত ; প্রশাসক নিয়োগ
-
নির্বাচন স্থগিতে যেসব কারণ দেখানো হয়েছে তা অত্যন্ত অযৌক্তিক ও ষড়যন্ত্রমূলক।
-
সকল পক্ষের মতামত না নিয়ে একপেশে সিদ্ধান্তে নির্বাচন স্থগিত করায় সাধারণ ভোটারদের তীব্র প্রতিবাদ
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত ‘বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা-২০২৫’ অনুযায়ী সকল নিয়মনীতি মেনে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশন (বিএসএএ) এর পরিচালনা পর্ষদের ২০২৫-২০২৭ মেয়াদের নির্বাচন ৯ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
এরইমধ্যে নির্বাচনের সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে কমিশন। আর একদিন পরেই নির্বাচন। ভোটারদের মাঝে বইছে অত্যন্ত উৎসাহ ও উৎসবের আমেজ।
এই অবস্থায় আওয়ামী স্বৈরাচারের দোসরদের ‘কূটচাল’ এ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক একপেশে ও পক্ষপাতিত্বমূলক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে নির্বাচন স্থগিত করে প্রশাসক নিয়োগ করে।
এভাবে সকল পক্ষের মতামত না নিয়ে এ অযৌক্তিক ও একপাক্ষিক কারণ দেখিয়ে নির্বাচন স্থগিত করায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন সাধারণ ভোটাররা।
শিপিং এজেন্টস সংশ্লিষ্টরা জানান, নির্বাচনের সমস্ত আয়োজন সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করার পর আগামী বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এমন সময় হঠাৎ করে প্রশাসক নিয়োগের বিষয়টি রহস্যজনক। সাধারণ শিপিং এজেন্টস ব্যবসায়ীরা এটিকে ভালোভাবে নেবে না।
কারণ স্বৈরাচারের দোসরদের একটি সিন্ডিকেট গত চার বছর ধরে শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন দখল করে আছে। এবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কিছু নির্দেশনায় পরিবর্তনের কারণে আগে পরপর দুইবার দায়িত্ব পালন করেছেন এমন কেউ এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারছেন না।
এ কারণে দোসরদের কেউ প্রার্থী হতে পারেনি। তবে অ্যাসোসিয়েশনের দখলদারিত্ব টিকিয়ে রাখতে বিকল্প হিসেবে তাদের একান্ত ঘনিষ্ঠজনদের নির্বাচনে প্রার্থী করেছেন। নির্বাচনে পরাজয়ের ভয়ে কৌশলে এ কাজটি করেছেন তারা।
এক বিবৃতিতে বলা হয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত ‘বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা-২০২৫’ অনুযায়ী সকল নিয়মনীতি মেনে অ্যাসোসিয়েশনটির সদস্য শিপিং এজেন্টরা ভোটার হওয়া থেকে শুরু করে নমিনেশন জমা দেয়া পর্যন্ত সকল কিছু সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করে ৯ অক্টোবর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া বাকি ছিল।
কিন্তু শেষ মুহূর্তে ডিটিও- বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক একপেশে পক্ষপাতিত্বমূলক ও অবিবেচক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে হঠাৎ করে ৭ অক্টোবর অযৌক্তিক ও একপাক্ষিক কারণ দেখিয়ে নির্বাচন স্থগিত করা হয়।
যাতে আমরা সকল সাধারণ ভোটাররা তীব্র ক্ষুদ্ধ ও মর্মাহত হয়েছি এবং এই অবিবেচক একপেশে ও পক্ষপাতিত্বমূলক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এভাবে সকল পক্ষের মতামত না নিয়ে নির্বাচন স্থগিতের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
এছাড়া বিএসএএ’র নির্বাচন স্থগিতের জন্য ডিটিও, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক যেসব কারণ দেখানো হয়েছে তা অত্যন্ত অযৌক্তিক ও ষড়যন্ত্রমূলক।
বিএসএএ নির্বাচনে দুইটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিল যেখানে একটি প্যানেল হলো ঐক্য পরিষদ ও অন্যটি সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান স্বৈরাচারের দোসর সৈয়দ আরিফের প্যানেল। যেখান থেকে সৈয়দ আরিফ পরপর দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার কারণে আহসান ইকবাল চৌধুরী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
কিন্তু আসন্ন নির্বাচনে নিজেদের ভরাডুবি বুঝতে পেরে সৈয়দ আরিফের প্যানেলের লোকজন মিলে (যাদের অনেকে ভোটার নয়) বিএসএএ নির্বাচন বোর্ড, এফবিসিসিআই সহ সর্বশেষ ডিটিও, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বরাবরে বিভিন্ন মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক অভিযোগ করে।
ডিটিও, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৭ অক্টোবর যে ৩ জন ব্যক্তির পত্রের সূত্রে নোটিশ জারি করে একপাক্ষিক প্রহসনমূলক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে নির্বাচন স্থগিত করেছেন সেখানে আহসান ইকবাল ছাড়া বাকি দুই ব্যক্তি সাকিবুল ও সৈয়দ ইকবাল আলী বিএসএএ নির্বাচনে ভোটার বা প্রার্থী নন। তাই তাদের অভিযোগসমূহ মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক হওয়ায় তা নির্বাচন বোর্ড কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়।
এ মিথ্যা অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন মর্মে বিভিন্ন ভোটার ও প্রার্থীরাও ডিটিও, বাাণিজ্য মন্ত্রণালয় বরাবরে পত্রের মাধ্যমে জানিয়েছেন। ঐক্য পরিষদ প্যানেলের প্রার্থীরাও এসব ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে ডিটিও, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে একাধিক পত্র মারফতে জানিয়েছেন।
কিন্তু নির্বাচন স্থগিত করে জারিকৃত নোটিশে সেসব পত্রের কোনো সূত্র উল্লেখ করা হয়নি, কিংবা কোনো শুনানিতে ঐক্য পরিষদের কোনো প্রার্থীকে মতামত দেওয়ার জন্য ডাকা হয়নি।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ ও আশ্চর্যের বিষয় হলো- ডিটিও, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক শুধুমাত্র সৈয়দ আরিফের প্যানেলের লোকজনের অভিযোগ আমলে নিয়ে এবং এর বিরোধী প্যানেল ঐক্য পরিষদের চিঠিপত্রের প্রতি কোনো কর্ণপাত না করে এমনকি সৈয়দ আরিফের ও আহসান ইকবাল চৌধুরীর বিরোধী প্যানেলের ভোটার ও প্রার্থীদের কোনো ধরনের সুযোগ না দিয়ে একতরফা ভাবে ষড়যন্ত্রমূলক একপেশে সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এভাবে মাত্র ২ দিন আগে নির্বাচন স্থগিত করা খুবই ন্যাক্কারজনক ঘটনা।
আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে এই পক্ষপাতমূলক সিন্ধান্ত প্রত্যাহার করে অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে বিএসএএ পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা জোর দাবী জানান সাধারণ ভোটাররা।
উল্লেখ্য, ৭ অক্টোবর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগের দুটি পৃথক চিঠিতে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসএএ) আসন্ন নির্বাচন স্থগিত করার পাশাপাশি বিএসএএ প্রশাসক হিসেবে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত কমিশনার (রাজস্ব) শারমিন জাহানকে নিয়োগ দেওয়ার তথ্য জানানো হয়।
তবে চিঠিতে পরবর্তী তারিখ সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। চিঠিতে প্রশাসক ১২০ দিনের মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করতে বলা হয়েছে।