
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের সদস্য পরিচয়ে দিয়ে এক আয়কর আইনজীবীকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সরোয়ার হোসেন রবি নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী প্রিয় দে গত ২০ মে মিরসরাই থানায় সাধারণ ডায়েরী (নং-৯৩০) করেছেন।
সরোয়ার হোসেন রবি মিরসরাই পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের মরহুম মো. তাজুল ইসলামের ছেলে।
প্রিয় দে বলেন, ‘মিরসরাই পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডে উপজেলা ভূমি অফিস সংলগ্ন আমার জমিতে গত ১৯ মে বিকেলে গাছ রোপন করার জন্য শ্রমিক দিয়ে কাজ করাই। ওই দিন রাত সাড়ে ১১টায় সরোয়ার হোসেন রবি নিজেকে জেলা যুবদলের সদস্য পরিচয় দিয়ে আমার নাম্বারে কল দেন।
এসময় সে আমাকে জিজ্ঞেস করে আমি কার অনুমতি নিয়ে মাটি ভরাট করেছি। মাটি ভরাট করতে হলে অনুমতি নিতে হবে কেনো আমি এমন প্রশ্ন করলে প্রতিউত্তরে তিনি বলেন, মাটি ভরাটের সময় সরকারি রাস্তা ব্যবহারে তার অনুমতি নিতে হবে।
এক পর্যায়ে যদি ওই রাস্তা ব্যবহার করা হয় তাহলে আমাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে এসে মারধর করবে এবং আমাকে প্রাণ নাশের হুমকী দেয়। এরপর সে কল কেটে দেয়।’
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের সদস্য সরোয়ার হোসেন রবির মোবাইলে একাধিকার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেন নি।
মিরসরাই থানার উপ-পরিদর্শক মো. আলা উদ্দিন বলেন, মোবাইলে হুমকি দেওয়ার বিষয়ে থানায় একটি জিডি করেছেন প্রিয় রঞ্জন দে নামের এক ব্যক্তি। বিষয়টি তদন্ত করে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
যে রাস্তা ব্যবহার করায় দেওয়া হয় হুমকী:
চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার সদর ভূমি অফিস সংলগ্ন ইটের নির্মিত রাস্তাটি শত বৎসর পুরানো বি. এস.জরিপ সিটভুক্ত চলাচলের পথ। উক্ত রাস্তা দিয়ে আশপাশের বাসিন্দা ছাড়াও প্রতিদিন হাজার হাজার সর্বসাধারণ ও যানবাহন চলাচল করে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কর্তৃক ইতোপূর্বে উক্ত রাস্তাটি ইটে নির্মাণ করা হয়। সড়কটির পার্শ্বে প্রিয় দে জমি হওয়ায় তিনিও এই সড়ক ব্যবহার করেন।
স্থানীয়রা জানান, উক্ত রাস্তা দিয়ে আশপাশের বাসিন্দা ছাড়াও প্রতিদিন হাজার হাজার জনসাধারণ ও যানবাহন চলাচল করে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কর্তৃক ইতোপূর্বে উক্ত রাস্তাটিতে ইট বসানো হয়।
সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের ‘এলজিসিআরআরপি’ প্রকল্পের আওতায় মিরসরাই পৌরসভা কর্তৃপক্ষ উক্ত রাস্তাটি আর.সি.সি দ্বারা নির্মাণের জন্য ই-টেন্ডার ইস্যু করা হয়। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রাস্তা নির্মাণ কাজ শুরু করলে, একটি পক্ষ নির্মাণ কাজে বাধা প্রদান করেন।
পক্ষটির দাবি উক্ত রাস্তার মধ্যে তাদের উত্তরাধিকার সূত্রে এক শতক জায়গা রয়েছে। পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বাদীপক্ষের কাগজপত্র পর্যালোচনা করে তাদের দাবি নাকচ করে দেন। পরবর্তীতে বাদীপক্ষ জেলা প্রশাসক চট্টগ্রাম ও পৌরসভা প্রশাসক (সহকারি কমিশনার ভূমি) কে বিবাদী করে রাস্তা নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার জন্য আদালতে নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেন। আদালত বাদি পক্ষের নিষেধাজ্ঞার আবেদন নামঞ্জুর করে গত ৯ মার্চ রায় দেন।
আদালত উক্ত রায়ে উল্লেখ করেন, সরকারি রাস্তা নির্মাণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যায় না, এতে রাষ্ট্রের উন্নয়নকার্য বাধাগ্রস্ত হয়। আদালত রায়ে আরও উল্লেখ করেন বাদীপক্ষের উক্ত রাস্তায় কোন স্বত্ত নেই। আদালতের রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পুনরায় নির্মাণ কাজ শুরু করলে, বাদীপক্ষ আবার নির্মাণ কাজে বাধা দেন।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রাস্তাটি নির্মাণের লক্ষ্যে খননের পর নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় আশপাশের বাসিন্দা ছাড়াও সর্বসাধারণ ও যানবাহন চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। দ্রুত রাস্তাটি সংস্কার ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য এলাকাবাসী নির্বাহী অফিসার ও পৌরসভার প্রশাসকের বরাবর একাধিক অভিযোগও দাখিল করেন।