ই-পেপার | বৃহস্পতিবার , ২১ নভেম্বর, ২০২৪

পাকিস্তানজুড়ে বিদ্যুৎ বিল নিয়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ

বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির কারণে পাকিস্তানে বিক্ষোভ চলছে। টেলিভিশন ফুটেজে দেখা যায়, ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা তাদের বিদ্যুৎ বিল পুড়িয়ে দিচ্ছেন। অনেকেই সরকার বিরোধী স্লোগান দিচ্ছেন। রাজপথে নারীরাও নেমে এসেছেন।

তাদের অভিযোগ, সরকারের চাপে জীবন চালানো কষ্টকর। এর প্রতিবাদে দেশটির বিভিন্ন শহরে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে ও বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন অনেকে। এরপর প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে করাচি, লাহোর, পেশোয়ার, মুলতান, রাওয়ালপিন্ডি, ইসলামাবাদসহ অন্যান্য শহরে।

আর এই বিক্ষোভ সহিংস রূপ নিতে পারে— এমন আশঙ্কা থেকে গত ২৭ আগস্ট রাজধানী ইসলামাবাদে জরুরি বৈঠক ডেকেছিলেন দেশটির তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী আনোয়ারুল হক কাকার।

এদিকে বিক্ষোভকারীদের হামলার হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে উত্তর-পশ্চিম খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বিদ্যুৎ সরবরাহ বিভাগ আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করেছে, পুলিশ যেন তাদের কর্মী এবং স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। নিরাপত্তার জন্য বিভাগটি তাদের কর্মীদের অফিশিয়াল যানবাহন থেকে লাইসেন্স প্লেট সরানোর নির্দেশ দিয়েছে।


  • এই মুহূর্তে জনগণকে স্বস্তি দেয়ার সুযোগ নেই। উল্টো ইঙ্গিত দেন, ভবিষ্যতে বাড়তে পারে ইউনিট প্রতি ট্যারিফ- পার্লামেন্টের ভাষণে অর্থমন্ত্রী


বিক্ষোভকারীরা জানান, বিদ্যুতের বিল তাদের বাড়ির ভাড়ার চেয়েও বেশি। গ্রাহকরা তাদের সাম্প্রতিক বেড়ে যাওয়া বিলের কপি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছেন, যা আগের মাসের তুলনায় নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে দেখা যায়।

একইভাবে পাকিস্তানে নির্বাচনের আগে জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হাজার হাজার ব্যবসায়ী এ বিলের প্রতিবাদে ধর্মঘট পালন করেছেন।

আন্তর্জাতিক গণ্যমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লাহোর, করাচি এবং পেশোয়ারের ব্যবসায়ীরা ধর্মঘট পালন করেছেন। এ সময়ে তারা বিদ্যুতের বিল এবং করের অযৌক্তিক বৃদ্ধি নিয়ে প্লাকার্ড প্রদর্শন করেছেন। বিষয়টি এখন ব্যবসায়ীদের কাছে অসহনীয় হয়ে উঠেছে বলেই সবাই স্বতস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করছেন। জনগণ দুমুঠো খাবারের জন্য হলেও এ বিল থেকে পরিত্রাণ চায়।

এদিকে, বিদ্যুৎ বিল নিয়ে দেশজুড়ে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চললেও সম্প্রতি ক্ষমতায় বসা পাকিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক সরকার এ সমস্যার কোনো সমাধান নিয়ে আসতে পারেনি এখনও।

অর্থ ও রিজার্ভ সংকটে থাকা দেশটি এখন আইএমএফের সহযোগিতার দিকে তাকিয়ে আছে। আর এজন্য বর্তমান সরকারকে আইএমএফের শর্ত ও জনগণের চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে হচ্ছে। এই চেষ্টাতেই হিমশিম খাচ্ছে বর্তমান সরকার।


  • দেশটির ফয়সালাবাদের কাছে দিজকোটে ৪০,০০০ রুপি বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে না পেরে এক ব্যক্তি আত্মহত্যার অভিযোগ


পার্লামেন্টে রাখা এক ভাষণে অর্থমন্ত্রী শামসাদ আখতার জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে জনগণকে স্বস্তি দেয়ার সুযোগ নেই। উল্টো ইঙ্গিত দেন, ভবিষ্যতে বাড়তে পারে ইউনিট প্রতি ট্যারিফ।

দেশটিতে গতবছর ৩০ শতাংশ পর্যন্ত হয়েছে মুদ্রাস্ফীতি। কোণঠাসা পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে পাকিস্তানকে ৩০০ কোটি ডলার তহবিল দেয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, আইএমএফ। পাশাপাশি শর্ত দেয়, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সরকারকে বাদ দিতে হবে ভর্তুকি।

তাছাড়া, নিজস্ব মুদ্রাকে সংকুচিত করা যাবে না রয়েছে এমন শর্তও। জুলাই মাসে অর্থবছর শুরুর পর রুপির সাড়ে ১০ শতাংশ দরপতন হয়েছে। বর্তমানে ডলারের বিনিময় মূল্য ৩০৪ রুপি।

এছাড়া পাকিস্তানের পরিস্থিতি এমন অবস্থায় গিয়ে পৌঁছেছে যে, দেশটির ফয়সালাবাদের কাছে দিজকোটে ৪০,০০০ রুপি বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে না পেরে এক ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দিজকোটের সাবরি টাউন এলাকার বাসিন্দা মুহাম্মদ হামজার (৩৫) পরিবার।

স্থানীয় পুলিশকে জানিয়েছে, আর্থিক অনটনে এমনিতেই সংকটাপন্ন জীবনযাপন করছিলেন হামজা। তার ওপর লাগামছাড়া বিদ্যুৎ বিলের বোঝা তার কফিনে শেষ পেরেক মেরেছে। বিল পরিশোধ করতে না পেরে নিজের ওপর গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করেন হামজা। নাবালক দুই সন্তান রয়েছে তার। তবে পরিবার এমন দাবি করলেও ঘটনার সত্যতা নিশ্চিতে এ বিষয়ে তদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছে দিজকোট পুলিশ।

 

লেখক- সাংবাদিক