ই-পেপার | বৃহস্পতিবার , ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪

বাংলাদেশ-ভারত : স্থল সীমান্ত চুক্তিতে কমেছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড

২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কে নতুন গতি সঞ্চার হয়েছে। ভারতে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পরে তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতের বর্তমান সরকার বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনর্গঠন ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের আন্তরিক সমর্থন বাড়িয়েছে। বিনিময়ে শেখ হাসিনা সরকার সহযোগিতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। যার মাধ্যমে উভয় দেশের মানুষ দারুণভাবে উপকৃত হচ্ছে। ট্রানজিট, ট্রান্স-শিপমেন্ট এবং আঞ্চলিক সংযোগ স্থাপনের ফলে দু’দেশের বাণিজ্য ও পর্যটনে সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।

বাংলাদেশের ভেতর ভারতের ১১১ খণ্ড জমি, আবার ভারতের ভেতর ৫১ খণ্ড জমি বাংলাদেশের! কার্যত অবরুদ্ধ ওই জমিগুলোর বাসিন্দারা ছিল নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত। ওই ছিটমহলের বাসিন্দাদের ৬৮ বছরের পুরনো সমস্যার সমাধান করে বিশ্বে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশ। ২০১৫ সালের ১ আগস্ট রাতে ওই ভূখণ্ডগুলোর বিনিময় কার্যকর হয়।

  • পৃথিবীর সব যুদ্ধই ভূমির জন্য। ভূমির জন্য লড়াই করে আমরা মরে যাই। কিন্তু বাংলাদেশ, ভারত আমরা দুটি দেশ, যারা ভূমিকে আমাদের সম্পর্কের সেতু করে তুলেছি।- ভারতের প্রধানমন্ত্রী


এর আগে ওই বছরের ৬ জুন ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিবরা ছিটমহল বিনিময় সংক্রান্ত পত্রবিনিময় করেন। পরের দিন ৭ জুন ঢাকা ছাড়ার আগে বক্তব্যে নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, ‘খুব কম মানুষই মূল্যায়ন করতে পেরেছেন যে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে স্থলসীমান্ত চুক্তি কি শুধুই ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি? কেউ যদি মনে করেন এখানে দু-চার কিলোমিটার জমি গেল আর কেউ দু-চার কিলোমিটার জমি পেল, এটা সেই চুক্তি নয়। এই চুক্তি হলো হৃদয়ের সংযোগকারী চুক্তি।’

ভারতের প্রধানমন্ত্রী সেদিন আরো বলেছিলেন, পৃথিবীর সব যুদ্ধই ভূমির জন্য। ভূমির জন্য লড়াই করে আমরা মরে যাই। কিন্তু বাংলাদেশ, ভারত আমরা দুটি দেশ, যারা ভূমিকে আমাদের সম্পর্কের সেতু করে তুলেছি।

স্থলসীমান্ত চুক্তি ও ছিটমহল বিনিময়ের জন্য ভারতের পার্লামেন্টের উভয় কক্ষ সংবিধান সংশোধন প্রস্তাব স্বাক্ষর করেছে সর্বসম্মতিক্রমে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশকে সুসম্পর্ক ও বন্ধুত্বের ইতিবাচক বার্তা দিতে চেয়েছে ভারত।

সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের কৌশলগত স্থল সীমান্ত চুক্তির কারণে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কমেছে বাংলাদেশের সঙ্গে সেই স্থল সীমান্ত চুক্তির জন্য ধন্যবাদ, জঙ্গিরা সেখানে কোনো আশ্রয় পেতে পারেনি। এটি তাদের উত্তর-পূর্বে তাদের অভিযান চালানো থেকে বিরত রাখে।

  • প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে, ভারত সফলভাবে অন্যান্য দেশগুলিকে উপলব্ধি করতে পেরেছে যে সন্ত্রাসবাদ এখনই নিয়ন্ত্রণ না করলে ভবিষ্যতে তাদেরও ক্ষতি করতে পারে।- জয়শঙ্কর


জয়শঙ্কর বলেছিলেন যে,”পাকিস্তান যেভাবে সন্ত্রাসবাদের চর্চা করেছে অন্য কোনো দেশ সেভাবে করে না। আপনি আমাকে বিশ্বের কোথাও দেখান যে পাকিস্তান এত বছর ধরে ভারতের বিরুদ্ধে কী করেছে। আমাদের নিজেদের কাছে পরিষ্কার হওয়া গুরুত্বপূর্ণ যে এই ধরনের আচরণ এবং কর্ম অগ্রহণযোগ্য এবং এর পরিণতি হবে,” জয়শঙ্কর বলেছিলেন।

ভারতকে “আইটি বিশেষজ্ঞ” (তথ্য প্রযুক্তি) হিসাবে বিবেচনা করা হলেও, প্রতিবেশী দেশটি “আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের বিশেষজ্ঞ” হিসাবে পরিচিত, মন্ত্রী কটাক্ষ করেন।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে, ভারত সফলভাবে অন্যান্য দেশগুলিকে উপলব্ধি করতে পেরেছে যে সন্ত্রাসবাদ এখনই নিয়ন্ত্রণ না করলে ভবিষ্যতে তাদেরও ক্ষতি করতে পারে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে আমরা বিশ্বকে সঙ্গে নিতে মোটামুটি সফল,” জয়শঙ্কর বলেছিলেন।

 

লেখক- সাংবাদিক