ই-পেপার | শনিবার , ১০ মে, ২০২৫

মামলার আসামী শামসুজ্জামান রাসেল ২০১৮ সাল থেকে চেয়ারম্যান

আওয়ামী লীগের প্রভার খাটিয়ে ২০১৮ সাল থেকে একটানা বাংলাদেশ শিপ হ্যান্ডলিং এন্ড বার্থ অপারেটর এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান পদ দখলে করে আছেন এ.কে.এম. শামসুজ্জামান রাসেল। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ছাত্রদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অন্যতম অর্থের যোগানদাতা ছিলেন তিনি। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর স্বৈরাচারের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে মামলার আসামী হয়ে আত্মগোপন চলে যান রাসেল। সেখান থেকে সমিতি নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছেন।

এদিকে আগামী নির্বাচনে বিএনপি- জামাতকে ম্যানেজ করে পুনরায় চেয়ারম্যান পদ ভাগিয়ে নিতে প্রাণপণ অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন স্বৈরাচারের দোসর রাসেল।

জানা যায়, ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত সরকার ২২ সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ মাস্টার্স ষ্টিভিডোর অ্যাসোসিয়েশন (রেজিং-৪৪৮৪) বাতিল করে বার্থ অপারেটর্স, শীপ হ্যান্ডলিং অপারেটর্স এন্ড টার্মিনাল অপারেটর্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সংগঠনকে অনুমোদন করে গেজেট প্রকাশ করে এবং ২০০৯ সালে এটি সংসদে বিল পাস হয়।

এরপর থেকে এই সংগঠন বহির্নোঙ্গরে পণ্য হ্যান্ডলিং করে আসছিল। ২০১৫ সালে হঠাৎ করে বাংলাদেশ মাস্টার্স ষ্টিভিডোর অ্যাসোসিয়েশন (রেজিং-৪৪৮৪) ঠিক রেখে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা বাংলাদেশ শিপ হ্যান্ডলিং এন্ড বার্থ অপারেটরর্স অ্যাসোসিয়েশন নাম দিয়ে গায়ের জোরে বহির্নোঙ্গরে পণ্য উঠানামার কাজ শুরু করে।

২০২২ সালে চট্টগ্রাম বন্দর কতৃপক্ষ চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রমিক পরিচালককে বৈধ সংগঠনের ব্যাপারে জানতে চিঠি দেয়। পরে বিভাগীয় শ্রম পরিচালক বার্থ অপারেটর্স, শীপ হ্যান্ডলিং অপারেটর্স এন্ড টার্মিনাল অপারেটর্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সংগঠনকে বৈধতা দিয়ে বন্দরকে চিঠি দেয়।

২০১৫ সাল থেকে সরকারী গেজেট, সংসদে পাশ হওয়া আইন এবং শ্রম আদালতকে পাশ কাটিয়ে বন্দরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত বাংলাদেশ শীপ হ্যান্ডলিং এন্ড বার্থ অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন ২০২৫ পর্যন্ত কাজ করেছে।

শিপ হ্যান্ডলিং এন্ড বার্থ অপারেটর সংশ্লিষ্টরা জানান, চট্টগ্রাম বন্দরের স্টীভিডোরিং প্রথা বিলুপ্ত হয়ে শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর চালু হবার পর ২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশ শিপ হ্যান্ডলিং এন্ড বার্থ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনে বর্তমান চেয়ারম্যান এ.কে.এম. শামসুজ্জামান রাসেল বিগত স্বৈরাচারী সরকারের (আওয়ামীলীগ) প্রভাব খাটিয়ে একটানা অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যানের পদ দখল করে আছেন।

একই সাথে এ.কে.এম. শামসুজ্জামান রাসেল, মোস্তাফিজুর রহমান, জসিম উদ্দিন ভুঞা, আসাদ খান, জহির উদ্দিন জুয়েল গং এবং তৎকালীন নৌ পরিবহনমন্ত্রী সহ চট্টগ্রামের আওয়ামীলীগের দলীয় সাংসদ সদস্যকে নিয়ে অ্যাসোসিয়েশনকে দলীয়করণ করেন।

এবং এরই ধারাবাহিকতায় তৎকালীন নৌ পরিবহন মন্ত্রী প্রকাশ্যে জানান যে, ২০১৫ ইং সালে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামীলীগ ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলনে এই সংগঠনের তৎকালীন নেতৃবৃন্দের সহযোগিতায় চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ করে সফল করা হয়েছিল এবং ওই বৈঠকে এ.কে.এম. শামসুজ্জামান রাসলকে চেয়ারম্যান করে ১২ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয় এবং শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রেও যাতে বিএনপি দলীয় প্রতিষ্ঠান সমূহ বাদ দেওয়া যায় সে প্রচেষ্টা চালান।

এছাড়া বাংলাদেশ শিপ হ্যান্ডলিং এন্ড বার্থ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের বর্তমান পরিচালনা কমিটি গত ২০১৮ সাল থেকে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কোন নির্বাচন না করে স্বৈরাচারী সরকারের দোসর হয়ে অন্যান্যদের বঞ্চিত করে কমিটিতে বহাল থাকেন এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ছাত্রদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অ্যাসোসিয়েশন থেকে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগকে লাখ লাখ টাকা আর্থিক সহয়তা করেন।

যার জন্য গত ২১/০৮/২০২৪ তারিখ চান্দগাঁও থানায় একটি হত্যা মামলা হয় (মামলা নং- ১৮/২০২৪)। তাতে শেখ হাসিনাকে ১ নং আসামী ও কমিটি চেয়ারম্যান এ.কে.এম. শামসুজ্জামান (রাসেল) ও কমিটির অন্যান্য সদস্যদেরকে আসামী করা হয়।

যার পরিপ্রেক্ষিতে জরুরী ভিত্তিতে উক্ত পরিচালনা কমিটি বিলুপ্তি করে এডহক কমিটি গঠন করে নতুন পরিচালনা কমিটি গঠন করার জন্য জোর দাবি উঠে।

গত ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এ.কে.এম. শামসুজ্জামান রাসেল আত্মগোপনে থাকায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।