ই-পেপার | রবিবার , ৯ নভেম্বর, ২০২৫

উন্নয়নের নামে দরপত্র ছাড়াই চট্টগ্রাম বন্দর ইজারা দেয়ার গভীর ষড়যন্ত্র

  • এনসিটি আন্তর্জাতিক দরপত্র ছাড়া বিদেশীদের হাতে তুলে দেওয়ার প্রতিবাদে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগরের উদ্যোগে মানববন্ধন
  • বন্দরের সাথে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে
  • শ্রমিকদের প্রাণের দাবি সিবিএ নির্বাচন দেওয়া হচ্ছে না

বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম মহানগরীর সভাপতি এস এম লুৎফর রহমান বলেছেন, চট্টগ্রাম বন্দর এদেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর। স্বাভাবিকভাবেই এই বন্দরের সাথে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। অতীতে বহু দুস্য জাতি এই বন্দর দখল করে আমাদের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিয়েছিল। বহুকাল থেকেই এই বন্দরকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে। বন্দর উন্নয়নের নামে কোন প্রকার প্রকাশ্য দরপত্র ছাড়াই আন্তর্জাতিক শক্তির কাছে এই বন্দর ইজারা দেয়ার গভীর ষড়যন্ত্র এখনো চলমান। এই বন্দর শুধুমাত্র দেশের অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি নয় বরং এ বন্দরের সাথে এদেশের ও জাতির নিরাপত্তা সম্পৃক্ত। সুতরাং এই বন্দর নিয়ে কোন ধরনের ষড়যন্ত্র আমরা বরদাস্ত করব না।

গতকাল শনিবার সকাল ১০ টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগরের উদ্যোগে চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি আন্তর্জাতিক দরপত্র ছাড়া বিদেশীদের হাতে তুলে দেওয়ার প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধনে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

চট্টগ্রাম মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক আবু তালেব চৌধুরী এর সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন নগর ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক হামিদুল ইসলাম, অর্থ সম্পাদক মুহাম্মদ নুরুন্নবী, ট্রেড ইউনিয়ন সম্পাদক মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, শিক্ষা ওপ্রশিক্ষন সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মজুমদার, পাঠাগার সম্পাদক ইঞ্জি: সাইফুল ইসলাম, বন্দর ইসলামী শ্রমিক সংঘের সভাপতি মুহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, সাধারন সম্পাদক মুহাম্মদ ইয়াছিন, বন্দর থানা সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম আদনানসহ বিভিন্ন থানা ও সেক্টরের নেতৃবৃন্দ।

এস এম লুৎফর রহমান বলেন, উন্নয়নের ধোয়া তুলে চট্টগ্রাম বন্দরকে বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার পায়তারা চলছে। তারা আমাদেরকে বলতে চায় আমরা নাকি উন্নয়ন চাই না। আমরা উন্নয়ন চাই তবে সেই উন্নয়ন কোনভাবেই এ দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে প্রশ্নের মুখে ফেলে নয়। এ বন্দরকে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকার একটি বিদেশী শক্তির হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। সেই স্বৈরাচারের দোসররা শেখ হাসিনার অসমাপ্ত কাজকে সমাপ্ত করার জন্য তড়িঘড়ি করছে।

আমরা স্পষ্ট ভাষায় সরকারকে জানিয়ে দিতে চাই, চট্টগ্রাম বন্দরকে আন্তর্জাতিক মানের বন্দর করার জন্য জাতির সামনে সুস্পষ্ট পরিকল্পনা প্রদান করতে হবে। এই বন্দর দেশের হাতে রেখেই পরিচালনা করতে হবে। প্রয়োজনে বিদেশি অপারেটর নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে তবে তা হতে হবে প্রকাশ্য দরপত্রের মাধ্যমে। আমরা কোন গোপন দলিল দস্তাবেজের কাছে এ বন্দর হস্তান্তর করতে দিব না।

তিনি বলেন, এই বন্দরে হাজারো শ্রমিক নিয়োজিত। বন্দর কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ অন্যায় ভাবে এই শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার ন্যায্য অধিকার হরণ করেছে। আমরা অবিলম্বে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া আহ্বান জানাচ্ছি।

এই বন্দর একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান। বন্দরকে লাভজনক প্রতিষ্ঠান করার নেপথ্য থেকে কাজ করে শ্রমিকরা। অথচ কথায় কথায় শ্রমিকদের উপর জুলুমের স্টিম রোলার চালানো হয়। শ্রমিকরা তাদের অধিকারের কথা যেন না বলতে পারে সেজন্য তাদের সভা সমাবেশের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তাদের চাকরি কেড়ে নেওয়া হয়। শ্রমিকদের প্রাণের দাবি সিবিএ নির্বাচন দেওয়া হচ্ছে না। আমরা বন্দর কর্তৃপক্ষ নিকট শ্রমিকদের সকল দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

এস এম লুৎফর রহমান বলেন আজকে যারা জাতিকে অন্ধকারে রেখে চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশীদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য নিজেদের বিক্রি করেছেন তাদের প্রতি আমরা হুঁশিয়ার উচ্চারণ করে বলতে চাই এদেশের একজন শ্রমিক জীবিত থাকতে আপনাদের অসৎ পরিকল্পনা সফল হতে দেওয়া হবে না।

তিনি বলেন, শ্রমিকদের সকল ন্যায্য দাবি মেনে নিতে হবে। শ্রমিকদের রক্ত ঘামে বন্দর পরিচালিত হয়। তাদের সাথে মানবিক আচরণ করতে হবে। তাদেরকে দাস ভাবলে হবে না। শ্রমিকদের অধিকার ও মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে হবে। আপনারা দেশের স্বার্থে কাজ করুন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন আপনাদেরকে সর্বদা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। কিন্তু কোন দেশবিরোধী তৎপরতা এই সংগঠন কোনোভাবেই মেনে নেবে না।

মানববন্ধনে শ্রমিক নেতৃবৃন্দরা বেশ কয়েকটি দাবি জানান। দাবিগুলো হলো- বন্দরের কর্মরত শ্রমিকদের আইডি কার্ড থেকে মালিকের নাম প্রত্যাহার করতে হবে, কন্টেইনার ডেলিভারি শ্রমিকের মজুরি জিসিবি এর সমান সিসিটি, এনসিটিতে দিতে হবে, এপ্রেইজ কন্টেইনার শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি প্রাপ্যতা অনুযায়ী দিতে হবে, লেসিং আনলেসিং শ্রমিকদের ডক শ্রমিকদের মত কন্টেইনার উঠানামা বোনাস দিতে হবে, শ্রমিকদের অবসরকালীন ভাতা এককালীন ৬০ লক্ষ টাকা দিতে হবে এবং পোর্ট ডিউটি, ঝুঁকিভাতা, গৃহ নির্মাণ ঋণ অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে।