ই-পেপার | বৃহস্পতিবার , ২১ নভেম্বর, ২০২৪

শিগগিরই দাম বাড়তে পারে বিদ্যুতের

আগামী মাস থেকে কার্যকর হচ্ছে গ্যাসের নতুন দাম। এতে সবচেয়ে বেশি বাড়ছে সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত গ্যাসের বিল। আর বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তি অনুসারে এসব বিল পরিশোধ করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এতে বছরে পিডিবির খরচ বাড়বে ৯ হাজার কোটি টাকার বেশি। বাড়তি এ খরচের চাপ সামলাতে উদ্বেগে আছে পিডিবি। বাড়তে পারে বিদ্যুতের দাম।

পিডিবি সূত্র বলছে, প্রতি ইউনিট (ঘনমিটার) গ্যাস ব্যবহার করে চার ইউনিট (কিলোওয়াট ঘণ্টা) বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম বেড়েছে ৯ টাকা; অর্থাৎ গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ বাড়বে গড়ে দুই টাকার বেশি। মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের অর্ধেক আসে গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্র থেকে। এতে সামগ্রিকভাবে ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বাড়বে গড়ে এক টাকা।

বাংলাদেশ তৈল গ্যাস খনিজ সম্পদ করপোরেশন পেট্রোবাংলার অধীনে থাকা ৬টি বিতরণ সংস্থার কাছ থেকে গ্যাস নেয় পিডিবি। দিনে গড়ে ১০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ পায় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে। বর্তমান দামে (৫ টাকা ৪ পয়সা) বছরে পিডিবির গ্যাস বিল দাঁড়ায় ৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ খাতে প্রতি ইউনিট গ্যাসের নতুন দাম করা হয়েছে ১৪ টাকা। এতে বছরে পিডিবির গ্যাস বিল দাঁড়াবে ১৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকার বেশি।

গত ১৮ জানুয়ারি গ্যাসের নতুন দাম ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। এ দাম ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হচ্ছে। এতে সর্বোচ্চ ১৭৯ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুৎ খাতে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম। বাড়ানো হয়েছে শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতেও। সব মিলিয়ে ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের গড় দাম ১১ টাকা ৯০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২১ টাকা ৬৭ পয়সা করা হয়েছে। গড়ে বেড়েছে ৮২ শতাংশ।

গ্যাসের দাম বাড়ানোর আগে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছে সরকার। এসব বৈঠকে ব্যবসায়ীরা বলেছেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রে কম দামে গ্যাস সরবরাহ করায় সরকারের ভর্তুকির চাপ বাড়ছে। আর এ চাপ সামলাতে গ্যাসে বাড়তি দাম দিতে হয় শিল্পকে। তাই বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়ানোর দাবি জানান ব্যবসায়ীরা। এরপর বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়িয়ে প্রায় তিন গুণ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গ্যাসের এই দাম বাড়ানোর কারণে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর দিকে যাবে পিডিবি। এতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে যাঁদের নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্র (ক্যাপটিভ) নেই, তাঁরা বাড়তি খরচের চাপে পড়বেন।

বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে ঘাটতি কমাতে গত নভেম্বরে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়ায় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এরপর গত ১২ জানুয়ারি ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। গত ১৪ বছরে এ নিয়ে ১১ বার বেড়েছে বিদ্যুতের খুচরা দাম। এটি জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে। একই সময়ে পাইকারি পর্যায়ে দাম বেড়েছে ১০ বার।

পাইকারি পর্যায়ে বর্তমানে দেশের ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার কাছে ৬ টাকা ২০ পয়সায় বিদ্যুৎ বিক্রি করে পিডিবি। সরকারি-বেসরকারি সব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে চুক্তি অনুসারে নির্ধারিত দামে বিদ্যুৎ কিনে নেয় পিডিবি। সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, ইউনিটপ্রতি তাদের বর্তমান খরচ ৯ টাকার বেশি। আগামী মাসে গ্যাসের দাম বাড়ার পর এটি ১০ টাকা ছাড়িয়ে যাবে। পাইকারি পর্যায়ে বাড়লে ভোক্তা পর্যায়েও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হতে পারে।