চীনের জিংজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলমানদের উপর চালানো নির্যাতনকে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন দাবী করে জাতিসংঘ ও মুসলিম বিশ্বকে জোরালো ভূমিকা রাখার আহবান জানিয়েছেন আলেম মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম সংসদ। পাশাপাশি চীনের পণ্য বয়কটের জন্য দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
গত শুক্রবার (১৪ জুলাই) কক্সবাজার আলীর জাহাল সাইমা ওসান সিটি হল মিলনায়তনে মাদক, সন্ত্রাস, মানব পাচার আরাকানসহ বিশ্বব্যাপী মুসলিম নিপীড়ন, উইঘুরের কান্না শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও উইঘুরের মুসলিম নির্যাতনের প্রতিবাদে এক প্রতিবাদ ও আলোচনা সভায় বক্তারা এ আহ্বান জানান।
এসময় বক্তারা বলেন, চীনের ২২ লাখ তুর্কি ও উইঘুর মুসলিমদের দীর্ঘদিন যাবৎ গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, যৌন নীপিড়ন, জোরপূর্বক আটকে রাখার পাশাপাশি চীনা সরকার মিডিয়ার সকল কর্মকাণ্ড স্তব্ধ রেখে বছরের পর বছর ২২ লাখ মুসলিমকে বিভিন্ন ডিটেনশন ক্যাম্পে আটকে রেখে তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে নির্যাতন, যৌন নীপিড়ন, হত্যাসহ অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
এছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় চীনারা পাকিস্তানিদের সহযোগিতা করেছিল। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এদেশের মুক্তিকামী জনতা তাদের সহযোগিতা পায়নি। মিয়ানমারের সরকারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবসন বন্ধে চায়নাদের পরোক্ষ যোগসাজশ রয়েছে।
চীনা সরকার মানবাধিকার কর্মী, সংবাদকর্মী, জাতিসংঘের কর্মকর্তা এমনকি সংবাদ সংগ্রহে আগ্রহী এমন কাউকে চীনের উইঘুরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, পুরো পৃথিবীকে অন্ধকারে রেখে চীনা সরকার এই সকল অপরাধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তারপরেও সামান্যতম সংবাদ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। যেমন বিবিসি, আল-জাজিরা বিভিন্ন উপায়ে চেষ্টা করে কিছু কিছু সংবাদ সংগ্রহ করে প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছে। যাহা দেখে ও শুনে আমরা হতবাক হয়েছি। পুরো বিশ্বের মানুষ এটা মেনে নিতে পারেনি। আমরা চীনা সরকারের এ ধরনের গর্হিত অপরাধ কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
বক্তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহ মিত্ররা চীনের উপর নামেমাত্র অবরোধ আরোপ করে দায়সারা দায়িত্ব পালন করেছে। কিন্তু চীনের দানব সরকার এই সামান্য অবরোধ ও চাপে ক্ষ্যান্ত হয়নি এবং হবেও না। তাদের থামাতে হলে বিশ্বের সকল দেশ মিলে জাতিসংঘে প্রস্তাব পাশ করিয়ে চীনের উপর অবরোধ আরোপ করে চাপ তৈরি করুন। অন্যথায় চীনা দানব সরকার কোনভাবেই গর্হিত কর্মকাণ্ড হতে পিছপা হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বক্তারা বলেন, আমরা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলতে চাই, আপনিতো এখন বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে সমাসীন। আপনার অদম্য সাহস এবং সুদূরপ্রসারী নেতৃত্বে বাংলাদেশ অনেকদূর এগিয়ে গেছে এবং আপনি সারাবিশ্বের প্রশংসা ও কুড়িয়েছেন। আপনার সাহসিকতা সারাবিশ্বে প্রশংসিত, আপনার সাহসিক নেতৃত্ব মুসলিমদের পক্ষে যাবে সেটাই আমরা আশা করি।
আপনিতো পারেন চীনের মুসলিম নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলতে। সাহস করে বলুন দেখবেন আপনার পাশে আরও অনেক বিশ্ব নেতা ও দেশ দাঁড়িয়ে যাবে। আর এতেই চীনের উইঘুরসহ বিভিন্ন অংশে বিপদগ্রস্থ আমাদের ভাইবোনেরা চীনা সরকারের করাল থাবা থেকে মুক্তি পাবে।
আলোচনা সভাটি আলেম মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম সংসদ কেন্দ্রীয় সভাপতি মুফতি ওসমান গনি চৌধুরীর সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন, আলেম মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম সংসদের চেয়ারম্যান আল্লামা সদরু্দ্দীন মাকনুন। প্রধান বক্তা UCTC ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. বেলান নুর আজিজী, সহ সম্পাদক মুফতি তানজিল আমীরসহ, সংদের কেন্দ্রীয় মহাসচিব ইয়াসীন হাবিব, প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা আব্দুল জাব্বার, ছাত্র নেতা এনামুল হক মঞ্জুর, ইসলামী আন্দোলন নেতা মাওলানা জাহাঙ্গীর রফিক, বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামা কক্সবাজার জেলা সভাপতি মাওলানা শোয়াইব, বিশিষ্ট লেখক খন্দকার হামিদ উল্লাহ, কেন্দ্রীয় সংসদের শিক্ষা সম্পাদক রিদওয়ানুল কাবীর, কক্সবাজার জেলা যুব আন্দোলনের সদস্য সাইফুল্লাহ চৌধুরী, খেলাফত মজলিস কক্সবাজার শহর শাখার সভাপতি মাওলানা ওমর ফারুক, আল-ফুরকান ফাউন্ডেশনের মহাসচিব মাওলানা ইলিয়াস নুরু, কক্সবাজার জেলা যুগ্ন আহবায়ক আর এম ফরিদুল আলম, আতা উল্লাহ ত্বকী, মুহাম্মদ সলিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।