ই-পেপার | বুধবার , ২৩ অক্টোবর, ২০২৪

আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ : ভারত ও বাংলাদেশের জন্য হতে পারে গেম-চেঞ্জার

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন উদ্বোধন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এই প্রকল্পটি বাসিন্দাদের মধ্যে যথেষ্ট উত্তেজনা তৈরি করছে, কারণ এটি ভারত ও বাংলাদেশ উভয়ের জন্যই একটি গেম-চেঞ্জার হতে পারে।

বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করে আগরতলা হয়ে ভারতের অন্যান্য সমুদ্রবন্দর থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে পণ্য পরিবহন করা যেতে পারে। এটি বাণিজ্য বাড়াতে সাহায্য করবে এবং পণ্যের দ্রুত এবং সাশ্রয়ী পরিবহন সহজতর করবে।


  • ভারতীয় ঋণের সহায়তায় বাস্তবায়িত এই প্রকল্পের ৯০ শতাংশের বেশি কাজ শেষ হয়েছে।


স্বাধীনতার আগে আখাউড়া আগরতলার রেলপথ হিসেবে কাজ করত। ভারতীয় ঋণের সহায়তায় বাস্তবায়িত এই প্রকল্পের ৯০ শতাংশের বেশি কাজ শেষ হয়েছে এবং রেললাইন স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে।

রেললাইন, দৈর্ঘ্যে ১৫.০৬৪ কিমি বিস্তৃত – ভারতে ৫.০৫ কিমি এবং বাংলাদেশে ১০.০১৪ কিমি – আগরতলার উপকণ্ঠে নিশ্চিন্তপুরে একটি আন্তর্জাতিক অভিবাসন স্টেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশের আখাউড়াকে সংযুক্ত করবে। এই স্টেশনটি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যাত্রী ও পণ্য বিনিময়ের জন্য একটি ডুয়েল গেজ স্টেশন হবে।

২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এর পরে, ২০১৬ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটি চতুর্থবারের মতো জুন ২০২৪ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। অন্য কথায়, এই প্রকল্পটি, যা ১৩ বছর ধরে চলমান ছিল, অবশেষে ফলপ্রসূ হচ্ছে।

প্রকল্পটি প্রাথমিকভাবে ২০২০ সালে শেষ হবে বলে আশা করা হয়েছিল, কিন্তু জমি অধিগ্রহণের সমস্যা এবং কোভিড -১৯ মহামারীর প্রাদুর্ভাবের কারণে এটি বিলম্বিত হয়েছিল। ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ রেললাইনটি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নিশ্চিন্তপুরে একটি আন্তর্জাতিক অভিবাসন স্টেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশের আখাউড়াকে সংযুক্ত করবে।

একবার চালু হলে, রেলপথ আগরতলা এবং কলকাতার মধ্যে ভ্রমণের সময় ৩১ ঘন্টা থেকে কমিয়ে ১০ ঘন্টা করবে, বাণিজ্য, পর্যটন এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের সুযোগ উন্মুক্ত করবে।

ভারতের রেল মন্ত্রক এই প্রকল্পের জন্য ১৫৩.৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। ডোনার (উত্তর পূর্ব অঞ্চলের উন্নয়ন) মন্ত্রক এই প্রকল্পে অর্থায়ন করছে এবং আনুমানিক ব্যয়ের ৭০৮.৭৫ কোটি টাকা ইতিমধ্যে সরবরাহ করা হয়েছে এবং ব্যবহার করা হয়েছে।

এই রেল সংযোগটি ১৬টি ট্রানজিট রুটের অংশ যা ঘোষণা করা হয়েছে, যা চট্টগ্রাম বা মংলা বন্দর থেকে ভারতের রাজ্যগুলিতে পণ্যবাহী পরিবহন সক্ষম করে।


  • প্রকল্পটি চূড়ান্ত হয়ে গেলে, ঢাকা হয়ে আগরতলা এবং কলকাতার মধ্যে যাতায়াতের সময়, বর্তমানে প্রায় ৩১ ঘন্টা, কমিয়ে ১০ ঘন্টা করা হবে। উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য, পর্যটন এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের সুযোগ উন্মুক্ত করবে।


এই রেল সংযোগের কাজ শেষ হলে ভারতের দুটি রাজ্য ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত হবে। এই নতুন রেল সংযোগ ভারতের কলকাতা এবং আগরতলার মধ্যে ভ্রমণের সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেবে।

আগরতলা থেকে কলকাতা পর্যন্ত ট্রেনের যাত্রা, ঢাকা হয়ে ৫০০ কিলোমিটার দূরত্ব জুড়ে, প্রায় ১৬ ঘন্টা সময় লাগবে। প্রকল্পটি চূড়ান্ত হয়ে গেলে, ঢাকা হয়ে আগরতলা এবং কলকাতার মধ্যে যাতায়াতের সময়, বর্তমানে প্রায় ৩১ ঘন্টা, কমিয়ে ১০ ঘন্টা করা হবে।

আগরতলার সাথে গঙ্গাসাগরের সংযোগকারী ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথ উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের সামগ্রিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। মিজোরাম থেকে যারা ১৫০ কিলোমিটার দূরে এবং আগরতলা থেকে যারা বর্তমান লাইন থেকে উপকৃত হবে।

ভারত ও বাংলাদেশ একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে যাতে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা পণ্য পরিবহনের জন্য বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করতে পারবেন।

এই রেলপথ শুধু দুই দেশের জনগণের চলাচলই বাড়াবে না, এটি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য আমদানি-রফতানিতেও ভূমিকা রাখবে, ফলে বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে এবং উভয় দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে মূল্য সংযোজন করবে।

রাজ্যগুলি শুধু তাই নয়, এই রেললাইনটি উভয় দেশের পর্যটন খাতকে চাঙ্গা করবে। নতুন রেল প্রকল্পটি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক বাড়াবে এবং সীমান্ত এলাকায় ক্ষুদ্র শিল্পের বিকাশে সহায়তা করবে এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পর্যটনকে উৎসাহিত করবে। দ্রুত রপ্তানি ও পণ্য আমদানির সুবিধা স্থানীয় উৎপাদকরা তাদের পণ্য দেশের বাইরে রপ্তানি করতে উপকৃত হবে।

 

লেখক- সাংবাদিক